ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

বিপদসীমার ওপরে কুশিয়ারা, চোখ রাঙাচ্ছে সুরমা

আপলোড সময় : ২৩-০৮-২০২৪ ১২:৪০:৪৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৩-০৮-২০২৪ ০২:০২:৩৬ অপরাহ্ন
বিপদসীমার ওপরে কুশিয়ারা, চোখ রাঙাচ্ছে সুরমা
টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি চারটি পয়েন্টে বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে সুরমা নদীর কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও ছুঁই ছুঁই করছে। যত সময় যাচ্ছে সিলেটের প্রধান এই দুটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় চতুর্থ দফা বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে, তবে গতকাল বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকায় পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জসহ সংলগ্ন এলাকাগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। কুশিয়ার নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী লিমন আহমেদ বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই বাজার পানি তলিয়ে যায়। সেই পানি দোকানে প্রবেশ করে জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে। চলতি মৌসুমে আমাদের এটি যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে গিয়েছে। গত দুইদিন হলো দোকানের ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে। দোকানে বেচা-কেনাও আগের মতো হয় না। প্রশাসনের উচিত ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার এলাকায় কুশিয়ারা নদীর একটি স্থায়ী বাধ নির্মাণ করে দেওয়া। 

ফেঞ্চুগঞ্জের পূর্ব বাজার এলাকার বাসিন্দা সুয়েব আহমেদ বলেন, নদীর পানি একটু বৃদ্ধি পেলেই বাসা-বাড়িতে প্রবেশ করে। এর থেকে কোনোভাবেই রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। গত কয়েক মাস ধরে পানির সঙ্গে লড়াই করছি। ঘরের ভেতরে পানি প্রবেশ করায় রান্না-বান্না করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজ করাও সম্ভব হচ্ছে না। কাজ করতে না পারলে সংসার কীভাবে চলবে। কাজ তো করতে হবে কিন্তু এরকম যদি পানি ঘরের ভেতরে থাকে তাহলে কাজ কীভাবে করব। পরিবারের ছেলে-মেয়েসহ ছয় জন, তাদের নিয়ে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছি। 

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ অমর চন্দ্র বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় থাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সিলেটে ভারী থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। 

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় নদীর তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে থাকলেও বৃহস্পতিবার সকালে শেওলা পয়েন্টেও বিপদসীমা অতিক্রম করে। তাছাড়া সুরমা নদীর কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বিপদসীমা অতিক্রম করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে জুড়ি নদী যুক্ত হয়েছে, এদিকে জুড়ি নদীও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেজন্য ওই পয়েন্টে  কুশিয়ারা নদীর পানি বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি ঢল নামা শুরু হয়েছে এতে করে নিম্নাঞ্চল এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নতুন করে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আবারও খোলে দেওয়া হবে। পাশাপাশি উদ্ধার কাজের জন্য নৌকা প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবক সবাইকে প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, উপজেলার সকল নির্বাহী কর্মকর্তাকে বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে। বিশেষ করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক যারা রয়েছেন তারাও যেন প্রস্তুতি থাকেন সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ